শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মাস্ক কি চলে যাচ্ছে জাদুঘরে

সালেক খোকন:
মাস্ক পরা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করছি। ঘটনাটি সপ্তাহখানেক আগের। ছুটির দিনে গিয়েছি বাজার করতে, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড-নিয়ন্ত্রিত এক বাজারে। পুরো বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা অধিকাংশের মুখেই নেই কোনো মাস্ক। মাছবাজারে উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ঠেলে যাই পরিচিত এক মাছ বিক্রেতার দোকানে। আমার মাস্ক পরা দেখে তিনি মুচকি হাসেন। প্রথম বুঝতে পারিনি হাসির কারণ। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘স্যার, দেশে কি করোনা আছে। এখনো মাস্ক পরেন আপনি। এই যে দেখেন কারও মুখেই মাস্ক নেই। বড় বড় লোকও মাস্ক খুলে ঘুরছেন। সরকারের কর্তাব্যক্তিরাও মাস্ক ছাড়াই মিটিং করছেন এখন। দেখবেন কয়েক দিন পরেই মাস্ক চলে যাবে জাদুঘরে।’ এই দোকানিকেই করোনার ঊর্ধ্বগতির সময়টায় মাস্ক পরা নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছিলাম। আর এখন সে-ই উপদেশ দিচ্ছে মাস্ক না পরার পক্ষে। দোকানির কথার শক্ত কোনো জবাব ওইদিন দিতে পারিনি। কেননা মার্কেটপ্লেস, বাসস্ট্যান্ড, পরিবহন কোথাও এখন মাস্ক পরা ব্যক্তি তেমন খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং কাউকে মাস্ক পরা দেখলে অনেকেই আড় চোখে তাকায়। যেন বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন তিনি। করোনার সংক্রমণ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের বিধিনিষেধ প্রায় উঠে গেছে। কিন্তু মাস্ক পরার বিধিনিষেধ থাকলেও সেটি আছে শুধুই কাগজে-কলমে। তাহলে সত্যিই কি মাস্ক চলে যাচ্ছে জাদুঘরে?

সপ্তাহ যেতেই করোনা যে আবার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে সে খবর উঠে আসছে গণমাধ্যমে। যখন লিখছি তখন ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের, যা গত তিন মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু। আর পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এ ছাড়া দেশে দুই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন উপধরনের (সাব-ভ্যারিয়েন্ট) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের গবেষণায় দুই ব্যক্তির শরীরে ওমিক্রনের নতুন উপধরন (বিএ ৪/৫) শনাক্তের কথা বলা হয়। আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অথবা বুস্টার ডোজসহ টিকা নেওয়ার মাধ্যমে অ্যান্টিবডি অর্জনকারীদের শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিচ্ছে ভাইরাসটির নতুন উপধরন বিএ.৪ ও বিএ.৫, গবেষণা থেকে এমন তথ্য জানায় হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বেথ ইসরায়েল ডেকোনেস মেডিকেল সেন্টারের গবেষক দল। বুধবার নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত নতুন ওই গবেষণাপত্রে তারা বলেন, আগে সংক্রমিত হওয়া থেকে অথবা টিকা গ্রহণের মাধ্যমে দেহে যে অ্যান্টিবডির সৃষ্টি হয় তার সক্রিয়তা করোনাভাইরাসের মূল ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট বা উপধরন বিএ.৪ ও বিএ.৫ ধরনের বিরুদ্ধে কয়েক গুণ কম। ফলে এটি দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার ভয় রয়েছে।

ওপরের তথ্য বলছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে। এ বিষয়ে সরকারকে সতর্কও করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, বড় ধরনের জনসমাগমসহ ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করবেন। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে না মানলে করোনার নতুন ঢেউয়ের সংক্রমণ অনেক ভয়াবহ হতে পারে। এ নিয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা চতুর্থ ঢেউয়ের মধ্যে প্রবেশ করেছি। ওমিক্রনের নতুন এক সাব-ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি সংক্রামক। যারা টিকা নেননি বা এক ডোজ নিয়েছেন তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন। যারা ২ ডোজ এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তাদের ঝুঁকি কিছুটা কম। শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ালে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।’ এ পরিস্থিতিতে কী করা প্রয়োজন? তিনি বলেছেন, ‘দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে। সরকারের উচিত এই ভাইরাসের রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সবার মধ্যে টিকা নিশ্চিত করা, জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ভাইরাসটি কোথা থেকে আসছে তা বের করা। যদি বাইরে থেকে এসে থাকে তাহলে বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা আরও জোরালো করতে হবে। আর দেশেই ছড়ালে ভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। খুব দ্রুত ব্যাপক কর্মসূচি নিলে ভাইরাসটি স্থিতিস্থাপকতা পর্যায়ে থাকবে এবং ধীরে ধীরে কমে আসবে। স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি জোরালো করা, সবার জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে।’

কিন্তু এ দেশে হঠাৎ করে কেন করোনার সংক্রমণ বাড়ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘করোনা তো এখনো শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু সবার মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা চলে এসেছে। কেউ আর স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। রাস্তায় অনেকেই মাস্ক পরছে না। সরকারি উদ্যোগে উদাসীনতা ও ধীরগতি দেখা গেছে। জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির মিটিংও নিয়মিত হচ্ছে না। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।’ সরকার ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও এখন এ বিষয়ে মোবাইল কোর্ট তেমন পরিচালনা হচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত সচেতনতাবোধও কমছে প্রবলভাবে। অথচ বর্তমানে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাস্ক পরলে ‘জীবাণু বহনকারী ড্রপলেট’ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থামাতে পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা উচিত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফেস মাস্ক পরলে শরীরের ভেতর অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ করোনাভাইরাস ঢুকতে পারে। সে ক্ষেত্রে হয়তো তার উপসর্গ হবে খুবই মৃদু বা আদৌ কোনো উপসর্গ দেখা যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনার নতুন ও চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই ঢেউ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি কতটুকু? বর্তমান অর্থনীতিতে করোনার কারণে আবার যেন সবকিছু বন্ধ করে রাখতে না হয় সেটি সবারই চাওয়া। তাই চতুর্থ ঢেউ ঠেকাতে এখনই সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ আবারও কঠোরভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন। গণপরিবহনগুলো যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, হাটবাজার, মার্কেট ও শপিং মলগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতারা যেন মাস্ক ছাড়া প্রবেশ না করে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া উচিত। সর্বোপরি প্রত্যেকেই যদি মাস্ক পরা বিষয়ে সচেতন হন তাহলেই এটি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

লেখক : গবেষক ও লেখক/contact@salekkhokon.net

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION